দুই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জাল করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
- আপলোড সময় : ০৭-১১-২০২৪ ০৮:১৪:৩৭ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৭-১১-২০২৪ ০৮:১৪:৩৭ পূর্বাহ্ন
শহীদনূর আহমেদ ::
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ও জেলা প্রশিক্ষণ বিষয়ক কর্মকর্তা সারোয়ার জাহানের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জাল করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানাযায়, ‘নতুন কারিকুলাম বিস্তরণ’ বিষয়ক প্রশিক্ষণে সাপোর্ট সার্ভিসের বিপরীতে নির্দিষ্ট সংখ্যক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কর্মচারীদের জন্য সরকার ভাতা বরাদ্দ দিলেও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে পুরোটাতেই ভাগ বসিয়েছেন ওই দুই কর্মকর্তা।
অভিযোগ থেকে জানাযায়, নীতিমালায় নতুন কারিকুলাম বিস্তরণ বিষয়ক প্রশিক্ষণ বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় হওয়ার কথা থাকলেও প্রশিক্ষণ খাত থেকে মুনাফা লুটতে জেলা শহরের সুনামগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে এর আয়োজন করেন সংশ্লিষ্টরা। প্রশিক্ষণ ভেন্যুর জন্য নির্ধারিত টাকা বরাদ্দ থাকলেও সাধারণ ক্লাসরুমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ করানো হয়। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৭, ২১, ২৩ ও ২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার প্রশিক্ষণে সাপোর্ট সার্ভিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শহরের লবজান চৌধুরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক আব্দুল গফুর ও সুনামগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এমএলএসএস শহীদুল ইসলাম। প্রশিক্ষণে তাদের ৬০০ টাকা করে সম্মানী দেয়া হয়। অথচ প্রশিক্ষণের বরাদ্দ অনুযায়ী প্রতি সাপোর্ট সার্ভিস ব্যক্তির নামে উত্তোলন করা হয় ৫ হাজার ৮৮১ টাকা। শুধু আব্দুল গফুর ও শহীদুল ইসলাম নন, জেলা শহরের বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক ও এমএলএসএসদের নাম ব্যবহার করে জাল স্বাক্ষর দিয়ে টাকা উত্তোলন করে আত্মাসাৎ করেন মাধ্যমিক অফিসার জাহাঙ্গীর আলম ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক কর্মকর্তা সারোয়ার জাহান।
অনুসন্ধানে জানাযায়, একইভাবে ২০২৩ সালের ২১, ২৩, ২৪, ২৬ ও ২৯ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার প্রশিক্ষণ করানো হয় সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানেও একই কায়দায় আত্মসাত করা হয় কর্মচারীদের নামে বরাদ্দের টাকা। দুইটি প্রশিক্ষণে বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২৭জন কর্মচারীর নামে ৫ হাজার ৮৮১ টাকা করে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৮৭ টাকা বরাদ্দ থাকলেও দুই প্রশিক্ষণের বিপরীতে মাত্র ৪ জন কর্মচারীকে নামমাত্র টাকা প্রদান করেন সংশ্লিষ্টরা। বাকি ২৩ জন সহায়ক কর্মচারী টাকা পাওয়ার দূরে থাক ট্রেনিং সম্পর্কে অবগত নন বলে জানিয়েছেন তারা। সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাত করতে জাল স্বাক্ষর দিয়ে টাকা উত্তোলন করেছেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম। এসব জালিয়াতিতে সহযোগী হিসেবে ছিলেন প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সারোয়ার জাহান।
প্রশিক্ষণে সার্পোট সার্ভিস হিসেবে হাজী মকবুল হোসেন পুরকায়স্থ উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক গিয়াস উদ্দিনের নামের ৫৮৮১ টাকা উত্তোলন হলেও প্রশিক্ষণের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
গিয়াস উদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, এমন কোনো ট্রেনিংয়ে আমি দায়িত্ব পালন করিনি। তাছাড়া আমার নামে যে বরাদ্দ তোলা হয়েছে তাঁর স্বাক্ষরও আমার না। এটি সম্পূর্ণ জালিয়াতি। এতো বড় কর্মকর্তা প্রতারণা করবেন, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
বুলচান্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক আবুল ফজল বলেন, এই স্বাক্ষর আমার না। তাছাড়া আমি ট্রেনিং সম্পর্কেও জানিনা। এসব জাল করে করা হয়েছে। যারা এই জালিয়াতির সাথে রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
লবজান চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক আব্দুল গফুর বলেন, আমি ট্রেনিংয়ে তিন দিন দায়িত্ব পালন করেছি। আমাকে ৬০০ টাকা দেওয়া হয়েছে। আমার কাছ থেকে কোনো স্বাক্ষর নেয়া হয়নি। এখন দেখছি সম্পূর্ণ জাল স্বাক্ষর দিয়ে আমার নামে ৫৮৮১ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এতো বড় অফিসার আমাদের সাথে এমন করেছেন আমরা কার কাছে বিচার দিবো?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুনামগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের ভেন্যু করা হয়েছিল। ভেন্যু প্রস্তুতে আমাদের অনেক কষ্ট ও অর্থ খরচ হয়েছে। ট্রেনিং শেষে যৎসামান্য টাকা দিয়েছেন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার। ভেন্যুতে বরাদ্দ কতো আমাদের জানানো হয়নি। আমাদের কাছ থেকে তিনি কোনো ভাউচারও নেননি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রশিক্ষণ বিষয়ক কর্মকর্তা সারোয়ার জাহানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কর্মচারীদের টাকা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের হেড মাস্টারের কাছে দেয়া হয়েছে। ট্রেনিংয়ের একটি নীতিমালা আছে, সেই অনুযায়ী সম্পন্ন করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে অপ্রচার করা হচ্ছে। কতিপয় শিক্ষক অপপ্রচার করছেন। আমি কোনো জালিয়াতি করিনি। সব অডিট করা হয়েছে। সাক্ষাতে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলবেন বলে তিনি জানান।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ